ঢাকার গণপরিবহন সংস্কারে আসছে ‘নগর পরিবহন’। ঢাকা শহরে ট্রাফিক সমস্যা এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা নিরসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে “নগর পরিবহন” উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের এই পরিকল্পনার আওতায় ঢাকার সব বাসকে একীভূত করে একটি সমন্বিত ও সুশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
‘নগর পরিবহন’ কি?
“নগর পরিবহন” হলো একটি আধুনিক এবং সমন্বিত বাস সার্ভিস ব্যবস্থা, যা একাধিক বেসরকারি বাস মালিকদের অধীনস্থ বাসগুলোকে একটি অভিন্ন নীতিমালার আওতায় পরিচালনা করবে। এর মাধ্যমে ঢাকায় চালু থাকা নানা রঙের, নানা রুটের এবং বিশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থাকে একীভূত করে একটি নিয়মিত, নিরাপদ এবং সময়োপযোগী গণপরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
উদ্যোগের মূল কারণ:
- অব্যবস্থাপনা: বর্তমানে ঢাকার রাস্তায় চলা বাসগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় নেই। প্রতিটি বাস মালিক ও চালক তাদের নিজস্ব নিয়মে পরিচালনা করেন, যা যাত্রীদের জন্য অস্বস্তিকর এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণ।
- অতিরিক্ত বাস ও ট্রাফিক জ্যাম: প্রতিদিন নতুন বাস সংযোজন এবং বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত বাস চলার কারণে ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়।
- নিরাপত্তার অভাব: বিভিন্ন বাস সার্ভিসের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে এবং প্রতিযোগিতার মনোভাব থাকে, যা যাত্রীদের ঝুঁকিতে ফেলে।
- গুণগতমানের অভাব: অনেক বাসের গুণগতমান অত্যন্ত নিম্নমানের, যা যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক নয়।
‘নগর পরিবহন’ এর সুবিধা:
- সমন্বিত রুট নেটওয়ার্ক: ‘নগর পরিবহন’ এর অধীনে, ঢাকার বাস রুটগুলো পুনর্বিন্যাস করা হবে। একই রুটে একাধিক বাস সার্ভিস চলার বদলে একটি নির্দিষ্ট বাস সার্ভিস থাকবে, যা সময়সূচি অনুযায়ী চলবে।
- একক ভাড়া ব্যবস্থা: ভাড়ার ক্ষেত্রে সমন্বিত ব্যবস্থা থাকবে, যাতে যাত্রীরা একই ভাড়ায় সেবা পেতে পারেন এবং ভাড়ার বৈষম্য দূর হবে।
- নতুন ও মানসম্মত বাস: পুরনো বাস সরিয়ে মানসম্মত ও আধুনিক বাস সার্ভিস চালু করা হবে, যাতে যাত্রীরা আরামদায়ক ভ্রমণ করতে পারেন।
- ডিজিটাল টিকিটিং: নগর পরিবহনের আওতায় ডিজিটাল টিকিটিং ব্যবস্থা চালু করা হবে, যাতে ক্যাশ লেনদেনের ঝামেলা কমে এবং যাত্রীদের সুবিধা বাড়ে।
- দুর্ঘটনা ও ট্রাফিক কমানো: একই রুটে একাধিক বাস না থাকায় চালকদের প্রতিযোগিতা কমবে, ফলে দুর্ঘটনার হার কমবে।
কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে?
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর নেতৃত্বে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
- বাস মালিক সমিতি, বিআরটিএ এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ একসঙ্গে কাজ করবে।
- প্রথমে পাইলট প্রকল্প হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট রুটে ‘নগর পরিবহন’ সার্ভিস চালু করা হবে। সফলতার পর ধীরে ধীরে সব রুটে এই ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হবে।
- বাস চালক ও হেলপারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে তারা নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন এবং যাত্রীদের ভালো সেবা দিতে পারেন।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান:
- মালিকদের অসন্তোষ: বাস মালিকদের মধ্যে শুরুর দিকে অসন্তোষ থাকতে পারে। তবে সরকারের সহযোগিতায় তাদের ক্ষতিপূরণ ও সমন্বয় ব্যবস্থা করা হবে।
- বাসের ঘাটতি: মানসম্পন্ন বাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে নতুন বাস ক্রয় করা হবে এবং পুরনো বাস মেরামত করা হবে।
- যাত্রীদের মানিয়ে নেওয়া: যাত্রীদের নতুন নিয়ম ও রুট সম্পর্কে অবগত করতে প্রচারণা ও জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
উপসংহার:ঢাকার গণপরিবহন সংস্কারে আসছে ‘নগর পরিবহন’ ব্যবস্থা চালু হলে যাত্রীদের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হতে পারে। এটি না শুধুমাত্র ঢাকার ট্রাফিক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে, বরং গণপরিবহন ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ, আরামদায়ক ও সুশৃঙ্খল করে তুলবে।
সরকারের সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকরী বাস্তবায়নই পারে ঢাকাকে একটি সুশৃঙ্খল নগর পরিবহন ব্যবস্থা উপহার দিতে।