ব্যাংক খাতে উদ্বেগ, সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণের উন্মোচন

ব্যাংক খাতে উদ্বেগ যেন কমছেই না। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ (নন-পরফর্মিং লোন বা এনপিএল) ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের আর্থিক খাতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতে লুকিয়ে থাকা ঋণ সমস্যার প্রকৃত চিত্র উন্মোচিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংক থেকে বিতরণ করা মোট ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে, যা দেশের আর্থিক ব্যবস্থার জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ।বাংলাদেশের এই খেলাপি ঋণের হার প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার তুলনায় অনেক বেশি।

বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ ও অর্থ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক প্রভাব তথা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রভাব খাটিয়ে একাধিক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয় এবং সেখান থেকে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।নামে-বেনামে ঋণগ্রহণ করেছে। ভুয়া প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের নামে ঋণ গ্রহণ করে অর্থ অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়।বাংলাদেশ ব্যাংকের আড়ালে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত গাফিলতির কারণে প্রকাশ পায়নিরতাছাড়া সরকারের পরিবর্তনের ফলে অনেক প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য লুকানো হয়েছিল। যা এখন প্রকাশ পেতে শুরু করেছে ব্যাংক খাতে উদ্বেগ ও কমছে।

খেলাপি ঋণের প্রভাব

খেলাপি ঋণের উচ্চ হার ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকট তৈরি করেছে এবং নতুন ঋণ বিতরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেশের আর্থিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমছে।   শিল্প ও ব্যবসায় নতুন ঋণের প্রবাহ কমে যাচ্ছে, যার ফলে কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

সমাধানের পথ

ঋণ প্রদানের আগে গ্রাহকের আর্থিক সামর্থ্য ও প্রকল্পের যথাযথ যাচাই নিশ্চিত করতে হবে।কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনা এবং প্রভাবমুক্ত করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজনখেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য কার্যকর আইন প্রণয়ন এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করে পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি।

সরকার বদলের পর লুকানো তথ্য উন্মোচিত হওয়ায় দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র সামনে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আগের ব্যবস্থাগুলো বন্ধ করে খেলাপি ঋণ সংকট মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে। তবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নীতিগত সংস্কার ও কঠোর আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি।দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত আর্থিক খাত গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

One thought on “ব্যাংক খাতে উদ্বেগ, সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণের উন্মোচন

Comments are closed.