সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং হ্রাস

সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং হ্রাস পেয়েছে বাংলাদেশে।মুডিস ইনভেস্টরস সার্ভিস বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং হ্রাসের পর ছয়টি ব্যাংকের রেটিং কমিয়েছে।  ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক।

ব্র্যাক ব্যাংক: দীর্ঘমেয়াদি (LT) স্থানীয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার (LC এবং FC) আমানতের রেটিং B1 থেকে B2-এ নামানো হয়েছেমার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক: LT LC এবং FC আমানতের রেটিং B2 থেকে B3-এ নামানো হয়েছে।সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংক: B2 LT LC এবং FC আমানতের রেটিং অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, তবে তাদের আউটলুক স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচকে পরিবর্তিত হয়েছে।

১৮ নভেম্বর মুডিস বাংলাদেশের সার্বভৌম দীর্ঘমেয়াদি রেটিং B1 থেকে B2-এ কমিয়েছে, যা দুই বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো রেটিং হ্রাস। স্বল্পমেয়াদি রেটিং “নট প্রাইম” অবস্থায় রাখা হয়েছে, তবে আউটলুক ২০১০ সালে মুডিস রেটিং শুরুর পর প্রথমবারের মতো স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচকে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এই রেটিং হ্রাস এবং নেতিবাচক আউটলুক সরকারি ও বেসরকারি খাতের জন্য ঋণ গ্রহণের ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করে, যা ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মাঝে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন অ্যাক্সেসে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।মুডিস বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস পুনর্বিবেচনা করেছে:

  • বর্তমান অর্থবছর: ৬.৩% থেকে ৪.৫%-এ কমানো হয়েছে।
  • পরবর্তী অর্থবছর: ৬% থেকে ৫.৮%-এ হ্রাস।

এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে তুলে ধরে, যেখানে মুদ্রাস্ফীতির চাপ মোকাবিলা এবং সাশ্রয়ী অর্থায়ন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং কমানোর পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দুর্বল করেছে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত কারণগুলো এবং এ থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য প্রতিকার নিম্নে আলোচনা করা হলো:

রেটিং হ্রাসের কারণসমূহ:

উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি:
মুদ্রাস্ফীতির হার দীর্ঘ সময় ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করছে এবং অর্থনীতির উপর চাপ বাড়াচ্ছে।

পরিচালন ব্যয়ের বৃদ্ধি:
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ এবং আমদানি ব্যয়ের বৃদ্ধি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ডলার সংকট:
ডলারের ঘাটতি বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে, যা আমদানি খরচ বাড়িয়ে তুলছে এবং রপ্তানি আয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।

অপর্যাপ্ত নীতি সমন্বয়:
দ্রুত নীতিগত ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ:
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রাস্ফীতি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে বিশেষ চাপ সৃষ্টি করছে।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ:

কঠোর আর্থিক নীতি গ্রহণ করে মুদ্রাস্ফীতি কমানো।
দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো।

বৈদেশিক রিজার্ভ শক্তিশালীকরণ:

রপ্তানি খাতকে উদ্দীপনা প্রদান করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ানো।
প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বাড়াতে প্রণোদনা প্রদান।

নীতিগত সংস্কার:

ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করে ঋণ ব্যবস্থাপনা উন্নত করা।
কালো অর্থনীতির পরিসর সংকুচিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:

বহুপাক্ষিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার চেষ্টা।
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সুষ্ঠু নীতিমালা এবং অবকাঠামো উন্নত করা।

স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো:

আমদানির উপর নির্ভরতা কমাতে স্থানীয় শিল্প ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো।
প্রযুক্তি স্থানান্তর ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি।

ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন:

সরকারি সেবা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে খরচ কমানো এবং সিস্টেমিক দুর্নীতি হ্রাস।

এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি জরুরি।এছাড়া  পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও প্রকল্পে বিনিয়োগ করে টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করা যেতে পারেনতুন বাজার অনুসন্ধান এবং পণ্যের বহুমুখীকরণ করে রপ্তানি আয় বাড়ানো হতে পারে অন্যতম উত্তরনের উপায়।